বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো নির্বাচন আয়োজন করা, কোনো দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন নয়। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোট আয়োজিত হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করছে না, তবে মতভিন্নতার জায়গাগুলোতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। তিনি সতর্ক করেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি” যেন আবারও গুপ্ত কৌশলে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে। এজন্য গণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বরাবরই শান্তিকামী, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক দল—যারা ভিন্নমত ও ভিন্নদলকে সম্মান করে। দেশের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য।
তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরে জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এলে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের নারী প্রধানের নামে “ফ্যামিলি কার্ড” এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি কৃষকদের জন্য “ফার্মার্স কার্ড” চালু করবে। পাশাপাশি যুবসমাজের বেকারত্ব নিরসনে কারিগরি ও ভাষা প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই দেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়। ধর্মীয় পরিচয় যেন কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।” তিনি যোগ করেন, “আমার আগে আমরা, আমাদের আগের দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।”
সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে সব ধর্ম ও গোত্রের মানুষের সমান মর্যাদা থাকবে।” তিনি সবাইকে একাত্ম হয়ে দেশ গড়ার আহ্বান জানান।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “বিএনপি সব ধর্মের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। আমাদের কাছে কেউ সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু নয়—সবাই সংবিধান অনুযায়ী সমান নাগরিক।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানান—ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে বিজয়ী করতে, যাতে সম্প্রীতিমূলক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে এক ছাত্র-জনতা সমাবেশে শহীদ মীর মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপিই সবচেয়ে বেশি গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে তরুণ-যুবকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে।মীর স্নিগ্ধ জানান, তিনি বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। সমাবেশে তাকে হাজারো জনতা ও শত শত মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বরণ করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, “খুনি হাসিনা” তার ভাইসহ দুই হাজার মানুষকে হত্যা ও বিশ হাজারকে আহত করেছেন, এবং সেই সরকারের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেন।সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী মীর শাহে আলম, যিনি বলেন, “স্নিগ্ধর বিএনপিতে যোগদান প্রমাণ করে জুলাই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় শক্তি বিএনপি।”উল্লেখ্য, শহীদ মীর মুগ্ধ জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, যার “পানি লাগবে পানি” আহ্বান সারাদেশে আলোড়ন তোলে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন এবং জানিয়েছেন যে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।রোববার বিকেলে ধানমণ্ডি থানার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন—তিনি ঢাকা থেকেই নির্বাচন করবেন বলে প্রায় নিশ্চিত।এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই লড়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারেন।তিনি আগে ভোটার হলেও ২০১৮ ও ২০২৪ সালের কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, এবার যেন ভোট দিতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে ঢাকায় ভোটার হয়েছেন।সরকার থেকে কবে পদত্যাগ করবেন, তা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।বিএনপির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ আছে কি না—এমন প্রশ্নে আসিফ মাহমুদ বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর কোনো আলোচনা হয়নি।রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জুলাই সনদ বিষয়ে তিনি জানান, সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত হবে।তিনি আরও বলেন, সরকারের তিনটি কাজ—সংস্কার, বিচার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর—একসঙ্গে এগোচ্ছে, এবং ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে পুনরায় নিশ্চিত করেন।শেষে তিনি বলেন, যেহেতু এখনো সরকারের অংশ, রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করবেন না; সময় এলে করবেন।
নির্বাচন সংক্রান্ত রিপোর্টের সংক্ষিপ্তসার:ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা।প্রকাশিত ভোটার তালিকা: মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন। চূড়ান্ত তালিকা ১৮ নভেম্বর প্রকাশের সম্ভাবনা।প্রবাসী ভোটার: পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। নিবন্ধনের জন্য ইসির নির্দিষ্ট অ্যাপ ১৮ নভেম্বর উদ্বোধন।ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ: ৪২,৭৬১টি ভোটকেন্দ্র এবং ২,৪৪,৬৪৯টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ।সংসদীয় আসনের সীমানা: পুনর্নির্ধারণ প্রক্রিয়া শেষ; কিছু সীমানা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট রয়েছে।নির্বাচনী প্রস্তুতি:ভোটার তালিকা, কেনাকাটা, কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ।নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন (৩টি দল) এবং ৬৬টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন সম্পন্ন।আইনবিধি সংশোধন (আরপিও) ও আচরণবিধি প্রস্তুত।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক চলছে।গণভোট: এখনও সরকার থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসাথে।জামায়াতে ইসলামী চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট।ইসি গণভোটের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করেনি; সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায়।গণভোট হলে অতিরিক্ত ভোটকক্ষ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনী সামগ্রী প্রয়োজন হবে।সংক্ষেপে:ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন; ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্র, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলমান। গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকায় ইসি এখনও আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ শুরু করেনি; সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী ইসি প্রস্তুতি নেবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের আর্থিক খাতে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ঘিরে হুন্ডি ব্যবসা ও জালনোটের প্রবাহ সক্রিয় হতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানো এখন অনেক আকর্ষণীয় এবং ব্যাংকগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। বৈধ পথে রেমিটেন্স বাড়ায় হুন্ডি কিছুটা কমলেও সম্প্রতি কিছু এলাকায় এর পুনরুত্থানের খবর পাওয়া গেছে।বাংলাদেশ ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্যান্য সংস্থা যৌথভাবে হুন্ডি ও জালনোট রোধে নজরদারি জোরদার করেছে। জনগণকে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে, যাতে জালনোটের ঝুঁকি কমে।অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেছেন, নির্বাচনের সময় টাকার প্রচলন বাড়ে, তাই রেমিটেন্স বৈধ পথে আনা ও হুন্ডি দমন জরুরি। শুভ লক্ষণ হলো—এখন ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দাম প্রায় সমান, ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহী।বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বৈধ পথে রেমিটেন্সের দাম স্থিতিশীল, তাই হুন্ডির আশঙ্কা কম। জালনোট রোধে সীমান্ত ও নগদ লেনদেনপ্রবণ এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং একটি সমন্বিত গ্রুপ গঠন করা হয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে, জমি বা সম্পত্তি কেনাবেচায় ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করতে এবং ইনফরমাল চ্যানেলের অর্থ থেকে বিরত থাকতে। নির্বাচন সামনে রেখে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করছে।
জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫ ও গণভোট ইস্যু ঘিরে বিএনপি, জামায়াত ও সরকারের মধ্যে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে।🔹 প্রধান অবস্থানসমূহবিএনপি: জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে। নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই হওয়া উচিত বলে তারা জোর দিচ্ছে।জামায়াত: নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি করছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া জাতীয় নির্বাচন নয়—এই অবস্থানেই অনড়।সরকার: রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিল, যা শেষ হচ্ছে আগামীকাল। ঐকমত্য না হলে সরকার নিজ দায়িত্বে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।🔹 মতবিরোধ ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্যবিএনপি বলছে, আলাদা দিনে গণভোট আয়োজন ব্যয়বহুল ও অনুপযুক্ত।জামায়াত পাল্টা বলছে, একই দিনে ভোট হলে জনগণ বিষয়টি বুঝতে পারবে না।জামায়াত বিএনপিকে আলোচনার আহ্বান জানালেও বিএনপি সাড়া দেয়নি।বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার “চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত” নিতে চাইছে।জামায়াত হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ১১ নভেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে ঢাকায় “ভিন্ন চিত্র” দেখা যাবে।🔹 বিশ্লেষণ ও আশঙ্কারাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন,বিএনপি–জামায়াতের এই মুখোমুখি অবস্থান আন্দোলনকে জটিল করে তুলতে পারে।সমঝোতা না হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।সরকার যদি একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়, তাতেও সংকট আরও গভীর হতে পারে।🔹 সরকারের বক্তব্যপ্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন,ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে—এ ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।দলগুলো ঐকমত্যে না এলে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তিনি ১৮ কোটি জনগণকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিচ্ছেন”—যা রাজনীতির জন্য বিপজ্জনক।সারমর্ম:👉 জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে।👉 ঐকমত্যের সময়সীমা শেষ হলেও সমাধান নেই।👉 সরকার বলছে—দলগুলো ঐকমত্যে না এলে, সিদ্ধান্ত নেবে সরকার নিজেই।👉 রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও বাড়ার আশঙ্কা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই। তিনি অভিযোগ করেন, নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা না নিয়ে সরকার নিজেই হাত দিয়ে গোল দিয়ে দিয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) ছাত্রদলের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।