এই বিষয়ে চলমান আপডেটগুলো দেখুন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গত ১১ আগস্ট চানখারপুল গণহত্যা মামলায় সূচনা বক্তব্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের ১৪ জুলাইয়ের টেলিফোন কথোপকথনের অডিও রেকর্ডের লিখিত রূপ তুলে ধরেন। এতে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন এবং ফাঁসির হুমকি দেন।মাকসুদ কামাল ফোনে বলেন,‘প্রত্যেক হল থেকে তো ছেলেমেয়েরা তালা ভেঙে বের হয়ে গেছে। এখন তারা রাজু ভাস্কর্যে, চার–পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে জমা হইছে। মল চত্বরে জমা হয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে আমার বাসাও অ্যাটাক (আক্রমণ) করতে পারে।’শেখ হাসিনা জবাবে বলেন,‘তোমার বাসা প্রটেকশনের (সুরক্ষার) কথা বলে দিছি।’মাকসুদ কামাল বলেন,‘জি জি।’শেখ হাসিনা বলেন,‘আগে একবার করছে...।’মাকসুদ কামাল বলেন,‘ওই রকম একটা প্রস্তুতি...লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হইছে।’শেখ হাসিনা বলেন,‘লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হলে হবে না, আমি পুলিশ এবং বিডিআর হয়ে বিজিবি আর...বলছি খুব অ্যালার্ট (সতর্ক) থাকতে এবং তারা রাজাকার হইতে চাইছে তো, তাদের সবাই রাজাকার। কী আশ্চর্য কোন দেশে বসবাস করি।’মাকসুদ কামাল বলেন,‘জি জি…বলতেছে আমরা সবাই রাজাকার।’শেখ হাসিনা বলেন,‘তো রাজাকারের তো ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও তাই করব। একটাও ছাড়ব না, আমি বলে দিছি। এই এত দিন ধরে আমরা কিন্তু বলিনি, ধৈর্য ধরছি, তারা আবার বাড়ছে।’মাকসুদ কামাল বলেন,‘বেশি বেড়ে গেছে এবং অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত...। আপা একটু ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাটা আরেকটু বাড়ানো...। আর আমার বাসার ওইখানেও...।’শেখ হাসিনা বলেন,‘ক্যাম্পাসের...ব্যবস্থা করছি, সমস্ত ক্যাম্পাসে…বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশ—সব রকম ব্যবস্থা হইছে। তোমার বাসার ভেতরে লোক রাখতে বলছি। ভেতরে কিছু রাখা আছে...এত বাড়াবাড়ি ভালো না।’মাকসুদ কামাল বলেন,‘বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের ছেলেদেরকে মেরেছে। আরও দু–একটা হলে একই কাজ করেছে। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে সাদ্দাম (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি), ইনান (নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক), শয়ন (নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি) ওরা আমার বাসায় ছিল সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদেরকে আমি ডেকে নিয়ে আসছি, ওরাও আসছে। ওদের সাথে বসে ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলা করতে করতেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে গেছে।’শেখ হাসিনা বলেন,‘কোন দেশে বাস করি আমরা। এদেরকে বাড়তে বাড়তে তো...রাজাকারদের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, সবগুলাকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না।’মাকসুদ কামাল বলেন,‘হ্যাঁ, এবার এই ঝামেলাটা যাক, এরপরে আমিও নিজে ধরে ধরে যারা এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, মেইন যারা আছে, এদের বহিষ্কার করব ইউনিভার্সিটি থেকে।’শেখ হাসিনা বলেন,‘সব এইগুলাকে বাইর করে দিতে হবে...আমি বলে দিছি আজকে সহ্য করার পরে অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে...কারণ ইংল্যান্ডে এ রকম ছাত্ররাজনীতির জন্য মাঠে নামল, কতগুলি মেরে ফেলায় দিল না?’মাকসুদ কামাল বলেন,‘জি জি জি।’শেখ হাসিনা বলেন,‘ওই অ্যাকশন না নেওয়া ছাড়া উপায় নাই। আমরা এত বেশি সহনশীলতা দেখাই আজ এত দূর পর্যন্ত আসছে।’মাকসুদ কামাল বলেন,‘এটা তো...আমরাও তো সহনশীলতা...আমি ছাত্রলীগকে বলছি যে তোমরা কোনো ধরনের ইয়ে করতে যাইও না। যেহেতু আদালতের বিষয়, আদালত নিষ্পত্তি করবে।’শেখ হাসিনা বলেন,‘না, এ আদালত হবে না, আবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিছে।’মাকসুদ কামাল বলেন,‘আবার রাষ্ট্রপতিকে কেউ এই রকম বলে যে ২৪ ঘণ্টার রাষ্ট্রপতিকে কেউ আলটিমেটাম দেয় একটা দেশে।’শেখ হাসিনা বলেন,‘রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছে...বেয়াদবির একটা সীমা থাকে…!’মাকসুদ কামাল বলেন,‘আপা, আমি আপনাকে যদি অন্য কোনো খারাপের দিকে যায়, আমি আবার একটু জানাব। কিন্তু রাতের বেলা জানাব না, হয়তোবা আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টার মধ্যে হলে জানাব।’শেখ হাসিনা বলেন,‘কোনো অসুবিধা নাই...আমি আমি সব সময়ই ফ্রি।’সার্বিকভাবে, এই কথোপকথনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের কঠোর দমন এবং রাজাকারদের ফাঁসির কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন এবং ক্যাম্পাস ও বাসার নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
Read full articleসাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে গত বছরের ১৪ জুলাই গোপন ফোনালাপে আন্দোলনকারীদের হুমকি দেওয়ার অডিও ট্রাইব্যুনালে উন্মোচিত হয়েছে। ওই ফোনালাপে তিনি রাজাকারদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে জানিয়ে আন্দোলনকারীদেরও ছাড় না দেয়ার কথা বলেছেন এবং ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।এদিকে, চানখাঁরপুল গণহত্যা মামলায় গতকাল প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে, যেখানে সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আজ অনুষ্ঠিত হবে।আদালত ট্রাইব্যুনাল ১-এর তিন সদস্যের প্যানেল এই মামলার বিচার করছেন।
Read full article