২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮.০৪%, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ কম। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন, যা গত বছরের চেয়ে ৩৮,৮২৭ কম।
ফল খারাপ হওয়ার মূল তিনটি কারণ:
করোনা ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্লাস ঘাটতি: পরীক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পর্যায়ে পর্যাপ্ত ক্লাস পায়নি।
গণিতে খারাপ ফল: বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গণিতে ফেল করেছে; ফলে সামগ্রিক পাসের হার কমে গেছে।
উত্তরপত্র মূল্যায়নে কড়াকড়ি: এবার নমনীয়তা ছাড়াই কঠোরভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে।
বোর্ডভিত্তিক পাসের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে বরিশাল (৫৬.৩৮%) এবং এগিয়ে রাজশাহী (৭৭.৬৩%)।
মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো করেছে—মেয়েদের পাসের হার প্রায় ৭১%, ছেলেদের ৬৫%।
এছাড়া, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৮৪টি (গতবার ছিল ২,৯৬৮টি) এবং ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানে কেউই পাস করেনি।
শিক্ষাবিদদের মতে, পাসের হার নয়—শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিয়া ওরফে আলফি তার বাবার লাশ মর্গে রেখেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ পেয়ে পাস করেছেন। ১৬ এপ্রিল রাতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় খুন হন তার বাবা আকরাম আলী। পরদিন ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় অংশ নেন আলফি। বাবার মৃত্যুর শোক সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসা ছিল তার সাহসিকতার উদাহরণ। পরিবার আশা করেছিল সে জিপিএ-৫ পাবে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তার অধ্যবসায় ও মেধার প্রশংসা করেছে।
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পাশের হার (৬৮.৪৫%) রেকর্ড হয়েছে। মূলত গণিত ও ইংরেজিতে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করায় ফল বিপর্যয় ঘটে। গণিতে ফেল করেছে ২৩% এবং ইংরেজিতে ১৩% শিক্ষার্থী। মানবিক বিভাগে ফেল করেছে প্রায় ৪৬% ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৩৪% শিক্ষার্থী।
জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৪৩ হাজার কম। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাশের হার ও জিপিএ-৫ উভয়ই বেশি। বরিশাল বোর্ডে সবচেয়ে কম পাশ (৫৬.৩৮%) এবং রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি (৭৭.৬৩%)।
ফলাফলের বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে পরীক্ষার হলে ও খাতা মূল্যায়নে কড়াকড়িকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোকে অপ্রাসঙ্গিক উত্তরেও নম্বর না দিতে বলা হয়, যার ফলে ফলাফলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধার প্রতিফলন ঘটেছে।
মোট ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাশ করেনি, আর শতভাগ পাশ করেছে ৯৮৪টি প্রতিষ্ঠান। ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন ১২ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টায় প্রকাশ করা হবে। ফল জানা যাবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এসএমএসের মাধ্যমে। এসএমএসে ফল পেতে নির্ধারিত ফরম্যাটে ১৬২২২ নম্বরে বার্তা পাঠাতে হবে। মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের প্রিরেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং কারিগরি বোর্ডের জন্য আলাদা কোড ব্যবহার করতে হবে। এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন, যা গত বছরের তুলনায় কম। ফলাফল পত্রিকায় বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যাবে না।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় প্রকাশিত হবে। এবার প্রতিটি শিক্ষা বোর্ড নিজ নিজ ওয়েবসাইটে আলাদাভাবে ফল প্রকাশ করবে। শিক্ষার্থীরা বোর্ডের ওয়েবসাইট অথবা মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে। ফল জানার জন্য SSC/ Dakhil লিখে নির্ধারিত ফরম্যাটে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন নেওয়া হবে ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সংবাদপত্রে ফল প্রকাশ হবে না।