এই বিষয়ে চলমান আপডেটগুলো দেখুন
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ভোটের কালি দেশে এসে পৌঁছেছে এবং নির্বাচনের আগের প্রায় সব মৌলিক কাজ শেষ হয়েছে।জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোট হলে ইসি সম্পূর্ণ প্রস্তুত।তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে এবং প্রার্থীরা মাঠে নামলে পরিবেশ আরও ইতিবাচক হবে। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার ওপর জোর দিচ্ছে কমিশন, যাতে অতীতের অনিয়মজনিত জনগণের অনাস্থা কাটানো যায়।ভোটার তথ্য:মোট ভোটার: ১২,৭৬,১২,৩৮৪ জনপুরুষ: ৬,৪৭,৬০,৩৮২ জননারী: ৬,২৮,৫০,৭৭২ জনতৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া): ১,২৩০ জননতুন ভোটার (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর): ১৩,০৪,৮৮০ জনঅন্যান্য প্রস্তুতি:চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ: ১৮ নভেম্বরভোটকেন্দ্র: ৪২,৭৬১টিমোট ভোটকক্ষ: ২,৪৪,৬৪৯টিপ্রবাসীদের জন্য প্রথমবারের মতো পোস্টাল ভোটিং অ্যাপ চালু হবে ১৬ নভেম্বর, যার মাধ্যমে নিবন্ধিত প্রবাসী ভোটাররা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।ইসির লক্ষ্য:একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা এবং ভোটকে একটি জনগণের উৎসবে পরিণত করা।
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে গণতন্ত্র ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে। তিনি বলেন, এই দিবসের প্রেরণায় বিএনপি সত্যিকার গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই কাজ করছে।মির্জা ফখরুল জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ ছিল দেশের অগ্রগতির মোড় ঘোরানো দিন। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী যে আলোচনা আহ্বান জানিয়েছে, সে বিষয়ে নতুন কোনো মন্তব্য না করে তিনি বলেন, বিএনপির অবস্থান আগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই পরিষ্কার করা হয়েছে।এদিন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানায়।
Read full articleযুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) তাদের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ এখনো নাজুক এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচনের প্রতিনিধিত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এতে ভোটের দিনে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।২০–২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করে আইআরআই মিশন নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রতিবেদনে জানায়—নির্বাচন কমিশন প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি ও প্রবাসী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির মতো সংস্কার করেছে।তবু রাজনৈতিক সহিংসতা, স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাস রয়ে গেছে।তরুণ ও প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত দিলেও দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, নারীর সীমিত প্রতিনিধিত্ব এবং উগ্র গোষ্ঠীর উত্থান উদ্বেগজনক।আইআরআই বলেছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের মূল চাবিকাঠি। তবে প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও রাজনৈতিক মতভেদে এটি অনিশ্চিত।প্রতিবেদনটি ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক করে বলেছে, ২০২৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কার আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য নির্ভর করবে তার নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং সংস্কার বাস্তবায়নের সক্ষমতার ওপর।আইআরআই আট দফা সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো, প্রার্থী নির্বাচনে স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা পরিকল্পনায় সমন্বয়, রাজনৈতিক তহবিল ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, এবং ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় নাগরিক শিক্ষা জোরদার করা।সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেছেন, আইআরআইয়ের মূল্যায়নের সঙ্গে সরকারের কোনো দ্বিমত নেই। তিনি জানান, সরকার সহিংসতা প্রতিরোধ ও নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা থাকলেও ইতিমধ্যেই অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মিলিয়ে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সহিংসতায় ১১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএসএস জানায়, অক্টোবর মাসেই ৬৪টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ১০ জন নিহত ও ৫১৩ জন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতা ঘটেছে—১৯৯১ থেকে ২০২4 সাল পর্যন্ত সহিংসতায় শত শত প্রাণহানি ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে, যেখানে ১৪১ জন নিহত হন।পূর্ববর্তী নির্বাচনের মতো এবারও সহিংসতা বাড়ছে মনোনয়ন, প্রচারণা ও ভোটের সময় ঘিরে। হামলা, বোমাবাজি, ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট, অগ্নিসংযোগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত সাধারণ ঘটনা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহিংসতার মূল কারণ হলো রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক অবিশ্বাস, ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলের মানসিকতা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনিক আচরণ। এসব কারণ গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।সার্বিকভাবে, আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এক উদ্বেগজনক সংকেত।