ইসরায়েলের নির্মম আগ্রাসন

গাজা পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ (১৫-১৬ জুলাই, ২০২৫):ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় একদিনে নিহত: ৯৪ জন, আহত: ২৫২ জনের বেশিঅক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত মোট নিহত: প্রায় ৫৮,৬০০ জন,মোট আহত: ১,৩৯,৬০৭ জনধ্বংসস্তূপ ও রাস্তায় পড়ে থাকা মরদেহ এখনও উদ্ধার সম্ভব হয়নিমানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ২৪ ঘণ্টায় নিহত: ৭ জন, আহত: ৩০ জনের বেশি২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে নিহত: ৮৫১ জন, আহত: ৫,৬৩৪ জন১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন অভিযানে নিহত: ৭,৭৫০ জন, আহত: ২৭,৫৬৬ জনজানুয়ারিতে অস্ত্রবিরতির পরও হামলা অব্যাহতআইসিসি যুদ্ধাপরাধের দায়ে নেতানিয়াহু ও গালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেআইসিজে-তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলমানউৎস: আনাদোলু এজেন্সি, ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত হয়েছেন আরও ৯৪ ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ২৫২ জন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮,৫৭৩ জন এবং আহতের সংখ্যা ১,৩৯,৬০৭ জনে পৌঁছেছে।বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। শুধু মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৮৫১ জন নিহত এবং ৫,৬৩৪ জন আহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির পর ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে ইসরাইলি অভিযান শুরু হলে আরও ৭,৭৫০ জন নিহত এবং ২৭,৫৬৬ জন আহত হন।

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে চলমান সংঘর্ষ ও ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। সংঘাত শুরু হয় শুক্রবার এক দ্রুজ ব্যবসায়ীর অপহরণের পর, যা দ্রুজ ও বেদুইন গোত্রের মধ্যে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে রূপ নেয়।ইসরায়েল মঙ্গলবার থেকে দামেস্ক ও সুয়েইদার সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে, যার মধ্যে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৬৯ জন দ্রুজ যোদ্ধা, ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১৬৫ জন সরকারি সেনা।ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তারা "দ্রুজ ভাইদের রক্ষা করছেন", এবং সিরিয়া সরকারের "গ্যাং" নির্মূল করছেন। সিরিয়া এই হামলাকে "বিশ্বাসঘাতক আগ্রাসন" বলছে।একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি হামলার সময় টিভি উপস্থাপক মেঝেতে পড়ে যান। meanwhile, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব মিত্রদের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেওয়া হয়েছে, এবং সরকার ও দ্রুজ নেতাদের সমঝোতায় সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে।তীব্র সংঘর্ষ, পানির সংকট ও হাসপাতালে গোলাবর্ষণে অত্যন্ত ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্নাইপার হামলায় নিহতদের সেবা দিতেও অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে পারছে না।

ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় গাজায় আরও ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজন ছিলেন ত্রাণপ্রার্থী।মঙ্গলবার উত্তর গাজার শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২৩ জন নিহত ও বহু আহত হন।দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি নারী নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হন।ত্রাণ নিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৮৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি (UNRWA) জানিয়েছে, গাজায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভোরে আরও ১৮ জন নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়।

On Sunday morning in Gaza’s Nuseirat camp, 13-year-old Abdullah and other children were killed by an Israeli airstrike while collecting water from a distribution point. His father, Mahmoud Abdul Rahman Ahmed, described the children as hungry and thirsty, queuing for water when the strike hit without warning. Graphic footage confirmed the aftermath.The Israeli military admitted the missile missed its intended target — a member of Palestinian Islamic Jihad — due to a technical error, and expressed regret for civilian casualties. However, Mahmoud accused Israel of deliberately sending a message that even water access won't be allowed.Al-Awda hospital reported 10 deaths, including six children, and 16 injuries. The UN called the incident part of a worsening “human-made drought crisis,” where many in Gaza receive less than the emergency minimum of 15 liters of water daily due to fuel shortages, infrastructure damage, and ongoing attacks.UN and aid officials condemned the attack, with UNICEF urging Israel to review its rules of engagement. Sam Rose from UNRWA called the strike emblematic of broader suffering, as an average of a classroom full of children are killed daily in Gaza.Another similar tragedy occurred days earlier when 10 children and 3 women were killed outside a clinic.Despite these casualties, Israeli representatives continue to blame Hamas for using civilians as shields. Mahmoud, like many in Gaza, urged the international community to pressure Israel to stop the war, saying, “We are victims. This massacre must end.”

গাজায় ইসরাইলের চলমান হামলা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের ২৩টি দেশ একজোট হয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশসহ মুসলিম ও লাতিন আমেরিকান অনেক দেশ আগামী ১৫–১৬ জুলাই কলম্বিয়ার বোগোটায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবে। সম্মেলনের আয়োজক কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা "The Hague Group for Accountability"-এর সহসভাপতি। এই জোটের লক্ষ্য হলো ইসরাইলের দায়মুক্তির অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।গাজায় অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭,৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, লাখো মানুষ গৃহহীন, এবং হাজারো মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। কলম্বিয়া এই পরিস্থিতিকে ‘মানবতার জন্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) একদিনেই কমপক্ষে ৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই ত্রাণ নিতে গিয়েছিলেন। রাফাহ, খান ইউনুস ও বুরেইজসহ বিভিন্ন স্থানে চালানো এসব হামলায় শিশু ও বেসামরিক লোকজনও নিহত হন। রাফাহতে ত্রাণকেন্দ্রের পাশে হামলায় ৫ জন এবং খান ইউনুসে শরণার্থী শিবিরে ৯ জন নিহত হন। গাজা শহরে বিমান হামলায় নিহত হন ২৪ জন। এছাড়া ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলায় তিন সেনা নিহত হলে পাল্টা হামলায় গাজার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৭,৮০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৩৭,০০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৪৩ ইসরায়েলি সেনা মানসিক বিপর্যয়ের কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। PTSD এবং ট্রমার কারণে আত্মহত্যার হার বেড়েছে, সর্বশেষ আত্মহত্যা করেছেন ২৪ বছর বয়সী সেনা ড্যানিয়েল এডরি। জনবল সংকটে মানসিক রোগে আক্রান্ত রিজার্ভ সেনাদেরও যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে। ৭ অক্টোবরের পর থেকে ৯,০০০ সেনা মানসিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীতে ৮০০ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিরোধী নেতারা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি সেনাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।

ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলায় গাজার অবরুদ্ধ এলাকায় একদিনে আরও ১০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৭,৫২৩ এবং আহত হয়েছেন ১,৩৬,৬১৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আহত হয়েছেন আরও ৩৫৬ জন। অনেক মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে, যেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি নিরাপত্তাজনিত কারণে। জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরাইল ১৮ মার্চ থেকে আবার হামলা শুরু করলে নতুন করে নিহত হন প্রায় ৭ হাজার মানুষ।

গাজায় ইসরাইলি হামলায় রোববার (৬ জুলাই) আরও ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৯ জন নিহত হয়েছেন গাজা সিটিতে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জিএইচএফ কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহের সময় ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৪৩ জন নিহত ও প্রায় ৪,৯০০ জন আহত হয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র জিএইচএফ-কে ত্রাণ সরবরাহে সহায়তা করছে, তবে এসব কেন্দ্রে হামলা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরু হয়। চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন, যা হামাস ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে এবং ইসরাইল আলোচনার জন্য প্রতিনিধি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

ইসরাইল ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে জানায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। হোসেইন, রাস ইসা ও সালিফ বন্দর এবং রাস কান্তিব বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই হামলা হয়। হুথিদের অব্যাহত হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। হুথি মুখপাত্র জানান, তারা নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে। হোদেইদাহ শহরে প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে পড়ায় শহর অন্ধকারে ডুবে গেছে। ইসরাইল আরও জানায়, হুথিদের দখলে থাকা ‘গ্যালাক্সি লিডার’ জাহাজেও হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েল ইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা গত এক মাসে প্রথম ইসরায়েলি হামলা। ইসরায়েলের দাবি, হোদেইদাহ, হোসেইন, রাস ইসা ও সালিফ বন্দরে এবং রাস কান্তিব বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই হামলা হুতিদের পাল্টা আক্রমণের জবাব। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর হুতিরা ইসরায়েলের জাহাজ ও ভূখণ্ডে একাধিকবার আক্রমণ চালিয়েছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশাল বাধা সৃষ্টি হয়। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হুতিদের অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আকাশ প্রতিরক্ষায় ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। হুতিরা দাবি করেছে, তারা নিজেদের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলি হামলা প্রতিহত করেছে। হোদেইদাহে হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে শহর অন্ধকারে ডুবে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।